শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: পালিত সন্ত্রাসী নিয়ে আক্রমণ করে মেয়রের ছেলে উজ্জ্বল বাহিনীর হাতে সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরশহরে। এর আগে দিরাই বাজারে প্রকাশ্যে তাণ্ডব চালিয়ে মেয়রের ছেলে উজ্জ্বল বাহিনীর হাতে রক্তাক্ত হন কৃষক ফয়েজ মিয়া। রবিবার দিবাগত রাতে পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়ার ছেলে ছাত্রলীগ নামধারী ট্রিপল মার্ডার মামলার অন্যতম ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী উজ্জ্বল বাহিনীর তাণ্ডবে ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে এলাকাবাসি। পৌর সদরের সেন মার্কেটের সামনে ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘণ্টাব্যাপি চলা তাণ্ডবলীলায় ছিনতাইয়ের শিকার লণ্ডন প্রবাসী জাবেদ মিয়া ও সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক ইমরান হুসাইনসহ ১০ জন আহত হয়েছে। এ নিয়ে দিরাই পৌরসদরসহ উপজেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে করিমপুর ইউনিয়নের সাকিতপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী জাবেদ সরদার মোটর সাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় সেন মার্কেটের সামনে মেয়রের ছেলের নিজস্ব বাহিনী হিসেবে এলাকায় পরিচিত সংঘবদ্ধ একটি ছিনতাইকারী দলের আক্রমণের শিকার হলে উপস্থিত জনতা ও টহল পুলিশ ছিনতাই কারীদেরকে দাওয়া করে। এ সময় ছিনতাই কারীদের হামলায় প্রবাসী জাবেদ মিয়া, তার ভাগ্নে জামিল আহমেদ, ব্যবসায়ী হেলাল মিয়া, মাহবুব মিয়া আহত হয়। ধাওয়া খেয়ে তারা বাজারের দিকে পালিয়ে যায়, ঘণ্টাখানেক পর মেয়রের ছেলে ছাত্রলীগ নামধারী উজ্জ্বল মিয়ার নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়ে ছিনতাইকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা দিরাই বাজারস্থ মেয়রের বরফ কল থেকে অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ধাওয়াকারী ব্যবসায়ীদের উপর হামলা করার জন্য পুনঃরায় সেন মার্কেটের সামনে আসে। এ সময় সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার দিরাই-শাল্লা প্রতিনিধি সাংবাদিক ইমরান হোসাইনের উপর হামলা চালায় ছিনতাই কারীরা। ছিনতাই কারীদের রডের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হলে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে ভর্তি করা হয়। ছিনতাই কারীদের হাত থেকে সাংবাদিককে বাঁচাতে এসে তাদের রডের আঘাতে আহত হন পথচারী শহিদুল মিয়া, দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল হক মিয়া। এ সময় ঘটনাস্থলের ৫০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করে দিরাই থানা পুলিশ। উপজেলা যুবলীগ নেতা মারফত মিয়া জানান, এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এদের নিয়ন্ত্রণেই দিরাইয়ে সকল অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ট্রিপল মার্ডার, কৃষক নির্যাতন, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসাসহ অনেক অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে থাকলেও তারা পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের হামলায় কিছুদিন আগে আহত হওয়া কৃষক ফয়েজ উদ্দিন জানান, সরকারি চাল বিতরণের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় প্রকাশ্য বাজারে আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে পা ভেঙ্গে দেয় মেয়রের ছেলে উজ্জ্বলের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী বাহিনী। কিন্ত থানায় মামলা করেও কোন বিচার পাইনি। যে কারণে তারা একের পর এক অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বাজারের ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা জানান, এই বাহিনী বিভিন্ন সময়ে বাজারে নানা অপকর্ম ও তাণ্ডব চালায়। প্রতিবাদ করলে নিজেদের আড়াল করতে গ্রামভিত্তিক সংঘর্ষের ঘটনায় জড়ানোর অপতৎপরতাও চালায়। দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এখনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে সাংবাদিক ইমরান হোসাইনের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান দিরাই প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ। গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এক জরুরী সভায় এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। দিরাই প্রেসক্লাব সভাপতি হাবিবুর রহমান তালুকদার জানান, এর প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার (আগামীকাল) প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসুচি পালন এবং পুলিশ সুপার বরাবরে স্মরকলিপি প্রদান করা হবে।